মুখের ভেতরের ঝিল্লি আবরণ(mucus membren) কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মুখে ঘা দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি মারাত্মক রোগ নয় হয়ে এমনিই স...
যথারীতি একজন ব্যক্তি খাবার সময় বেদনাদায়ক বা শিশুরা খাবার সময় কান্না করলে চিন্তা করতে হবে হয়ত মুখের মধ্যে ক্ষত হয়েছে। এটি বার বার ফিরে আসা অত্যন্ত বিরক্তিজনক এবং বেদনাদায়ক। যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হূদেরাগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাঁদের মুখে জীবাণু বিস্তার করে এমন ঘা হতে পারে। লিউকোমিয়া, লাইকেন প্লানাস ইত্যাদি কারণেও মুখে ঘা হতে পারে। তবে সাধারণত সবচেয়ে বেশি যে কারণে মুখে ঘা হয়, তাকে বলে অ্যাপথাস আলসার। জিব, মাড়ি ও মুখের ভেতর দিকে অনেকটা ব্রণের মতো দেখতে সাদা ফুসকুড়ি বের হয়। এটি বারবার হয়। বিশেষ কোনো ভিটামিনের স্বল্পতা, কোনো দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।
কারণসমূহঃ
* আঘাতের কারনে ক্ষত হলে, সেটা ছোট শারীরিক ক্ষত কিংবা রাসায়নিক ভাবে ক্ষত যাই হোক।
* ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া- ক্যামোথেরাপি, HIV ইত্যাদি।
* বার বার মুখের ঘা এর পিছনে প্রধান কারণ খারাপ মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি।
* পুষ্টির অভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ। ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১২ অভাবে ঘা হয়। এছাড়াও কৃত্রিম চিনি দ্বারা তৈরী খাদ্য যথা- চকলেট, জুস, কোক, চুইংগাম ইত্যাদি।
* মুখে ক্যানসার হলে যেমন- তামাক (সিগারেট, গুল, জর্দা ইত্যাদি) সেবন করার কারনে স্কুয়ামাস সেল কারসিনোমা নামে হয়।
* পাকস্থলিতে গ্যাস্ট্রিক রসের( HCl) বিরুপ প্রভাব এর কারণে মুখে বার বার ঘা দেখা দেয়।
* উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রায়ই মুখে ক্ষত তৈরি করে, যদি ভিটামিন বি কম্পেক্স এর সঙ্গে সহযোগী খাবার হিসেবে না দেওয়া হয়।
* নির্দিষ্ট কিছু টুথ পেস্ট, মাউথ ওয়াশ ইত্যাদিতে এলার্জি প্রতিক্রিয়া থাকাতে পারে।
* মানসিক চাপ অনেক সময়ই মুখের ঘা বৃদ্ধি করে (Psychosomatic) ।
প্রতিকারঃ
* ভাল মৌখিক এবং দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে।
* মুখের মধ্যে কোনো ফুস্কুড়ি হলে অবহেলা না করে অবিলম্বে আপনার চিকিত্সক সঙ্গে পরামর্শ করুন।
* চিনি, চিনির তৈরি খাবার—যেমন মিষ্টি, চকলেট, জুস, কোমল পানীয় ইত্যাদি বেশি খাওয়া ঠিক নয়। আঠালো চকলেট আরও ক্ষতিকর।
* প্রতিদিন লবণ-পানি দিয়ে কুলি করার অভ্যাস ভালো।
* প্রতিদিন দুবার অন্তত দুই মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করবেন।
* পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পূরক খাবার এবং সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে ( প্রতি দিন কমপক্ষে ১০ গ্লাস )।
* গ্যাস্ট্রিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।
* ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া উচ্চ মাত্রায় ওষুধ খাওয়া যাবে না।
* ইতিবাচক মনোভাব এবং নিয়মিত ব্যায়াম সবার জন্যেই উপকারী।
* অতিরিক্ত ঝাল এড়িয়ে চলা।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বার বার মুখের ঘা নিরাময় ৩টি পদক্ষেপ কাজ করে-
১. ব্যথা ও দুর্ভোগ দূরীকরণের লক্ষে
২. মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে
৩. ভবিষ্যৎ পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধঃ
হোমিওপ্যাথি ওষুধ সবচেয়ে জনপ্রিয় রোগ নিরাময়ের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও সদৃশ উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এটি উপসর্গ ও জটিলতা মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য অবস্থায় রোগীর ফিরে যাবার একমাত্র উপায়। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু মুখে ঘা চিকিত্সা নয়, তার অন্তর্নিহিত কারণ ও স্বতন্ত্র প্রবণতা মোকাবেলায়ও সহায়তা করে। স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন এবং চিকিত্সার জন্য, রোগীকে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ও রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
মুখে ঘা চিকিত্সার সহায়ক ঔষধগুলো নিম্নরুপঃ মার্ক সল, ক্যালি মিউর, বেলাডোনা, হিপার সালফ, সালফার, ফসফরাস, ল্যাকেসিস, নাক্স ভম, নাইট্রিক আসিড, ন্যাট্রাম মিউর ইত্যাদি।
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete