বাংলাদেশে এপেক্স আন্দোলনের সূত্রপাত ১৯৬১ সালের উনিশ জুলাই হতে। প্রতিষ্ঠাতা ক্লাব - এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা তখন এপেক্স অষ্ট্রেলিয়ার অন্তর্গত...
বাংলাদেশে এপেক্স আন্দোলনের সূত্রপাত ১৯৬১ সালের উনিশ জুলাই হতে। প্রতিষ্ঠাতা ক্লাব - এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা তখন এপেক্স অষ্ট্রেলিয়ার অন্তর্গত জোন ১০ এর আওতায় এর ক্লাব নম্বর ছিল ৪০৮। এরপর ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম ক্লাব সনদ লাভ করার পর ঢাকা এবং চট্টগ্রাম ক্লাবের সমন্বয়ে এপেক্স অষ্ট্রেলিয়া এ দুই ক্লাবকে জোন ১০ এর আওতায় জেলা ৭ নামক নতুন একটি জেলা ঘোষণা করে। ১৯৬৬ - ৬৭ সালে এর প্রথম গভর্নর মনোনীত হয়েছিলেন ইন্জি,সুলেমান খান।
১৯৬৭ হতে ১৯৭৬ সাল নাগাদ দশ বছরে দশজন জেলা গভর্নর প্রথমোক্ত দু' টি ক্লাবের স্থলে সাতটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এই সাত সনদপ্রাপ্ত ক্লাব নিয়ে ১৯৭৬ সালের ৬ ও ৭ মার্চ এদেশে স্বাধীন এসোসিয়েশনের মর্যাদা লাভ করে।১৯৭৬ সাল হতে ৭৮ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রথম তিন জাতীয় সভাপতি যথা ড এস এ শাকুর, সৈয়দ শহিদউল্লাহ ও আহমেদ রফিকের উদ্যোগে এদেশে সাত ক্লাব হতে বর্ধিত হয়ে আঠারোটি ক্লাবে পৌছায়।
দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ সকল ক্লাবে যাতায়াত ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা এবং একে অপরের সাথে আদান-প্রদানের সমস্যা বিবেচনা করে এদেশের এপেক্স নেতাগণ ১৯৭৯ সালে বরিশাল ক্লাবের আয়োজনে চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে সারা বাংলাদেশে এপেক্স আন্দোলনকে প্রশাসনিক সুবিধার্থে চারটি জেলায় ভাগ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
জেলা ১ :--ঢাকা বিভাগের উত্তরান্চলের ক্লাব এবং এ সব ক্লাবের স্পন্সরকৃত ক্লাব সমুহ নিয়ে জেলা এক যার আওতাধীন যশোহর ক্লাবও ছিল। এ জেলার প্রথম গভর্নর হন হোসাইন মীর মোশাররফ, ঢাকা ক্লাব।
জেলা ২ :-- ঢাকা শহরের দক্ষিণের ক্লাব সহ সিলেট বিভাগের সকল ক্লাব নিয়ে গঠিত জেলা ২। এর প্রথম গভর্নর ছিলেন সিলেট ক্লাবের এড,এম এ কুদ্দুস।
জেলা ৩:-- বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগ যার আওতায় বৃহত্তর নোয়াখালী, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা সহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছিল, এ-সব ক্লাব নিয়ে গঠিত হয় জেলা ৩। এর প্রথম জেলা গভর্নর ছিলেন চাঁদপুর ক্লাবের প্রফেসর তাজুল ইসলাম।
জেলা ৪:-- বৃহত্তর বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ক্লাব সমূহ কিন্তু যশোহর ক্লাব বাদে আর ফরিদপুর ক্লাব নিয়ে গঠিত হয় জেলা ৪।এর প্রথম গভর্নর মনোনীত হন বরিশাল ক্লাবের প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম।
উপরের জেলা সমুহের কার্যকাল ১৯৭৯সাল হতে ১৯৮৩ সাল অবধি চলতে থাকে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে উত্তর বংগ সহ সিলেট বিভাগে ক্লাবের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জেলা ব্যবস্থার পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
১৯৮৪ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সম্মেলনে জেলা ব্যবস্থাকে অঞ্চল ভেদে চারটির স্থলে সাতটি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এর ফলে
জেলা ১ :--এর বর্তমান অবস্থায়ই বলবত থাকে।
জেলা ২ :- সিলেট অন্চলকে পৃথক করে ঢাকা মহানগর ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার ক্লাবগুলো নিয়ে জেলা ২ গঠিত হয়।
জেলা ৩ :- বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলার ক্লাব সমুহ নিয়ে পূর্ববত্ জেলা ৩ থাকে।
জেলা ৪ :--সিলেট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ক্লাব নিয়ে জেলা ৪ গঠিত হয়।
জেলা ৫ :--গঠিত হয় বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ক্লাব সমূহ নিয়ে। ব্যতিক্রম খুলনা বিভাগের বাগেরহাট ক্লাব এ জেলার স্পন্সর শীপ আর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে।
জেলা ৬ :--গঠিত হয় বৃহত্তর খুলনা বিভাগের ক্লাব সমূহ নিয়ে। বাগের হাট ক্লাব বাদে।
জেলা ৭ :---গঠিত হয় ওই সময়ের বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগ, তখন রংপুর, দিনাজপুর বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগের অংশ ছিল।
১৯৮৪ সাল হতে ২০০৮ সাল নাগাদ এ ভাবে সাত জেলা দ্বারা এপেক্স বাংলাদেশ পরিচালিত হতো।
এর মাঝে দেশব্যাপী এপেক্স ক্লাবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের ক্লাব সমূহকে পরিচালনা করতে জেলা গভর্নরগণকে হিমশিম খেতে হতো। প্রয়োজন হয়ে পড়ে জেলা ব্যবস্থার পুনর্গঠনের।
ফলশ্রুতিতে ২০০৮ সালের জাতীয় সভাপতি এপে, রিদওয়ান শাহিদীর নেতৃত্বে পরিচালিত জাতীয় বোর্ড এপেক্সের সাবেক জাতীয় সভাপতি ও লাইফ গভর্নর আবদুর রব শিকদারকে আহবায়ক করে এপে,শাহ কামালুদ্দীনকে সদস্য ও টি কে বাড়ৈ তরুণকে সদস্য সচিব করে একটি সাব- কমিটি গঠন করে দেয়।
ওই সাব কমিটি বিভিন্ন ক্লাবের সাথে আলোচনা করে এবং জেলা ভিত্তিক প্রশাসনিক সুবিধাদি বিচার বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের এপেক্স ক্লাব সমূহকে সাত জেলার পরিবর্তে নয়টি জেলায় রুপান্তর করার জন্য সুপারিশ মালা তৈরি করে। সেই সুপারিশ অনুযায়ী ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এপেক্সের তেত্রিশ তম জাতীয় সম্মেলনে বিষয়টি আলোচিত হয়।
সে সম্মেলনে কমিটির সুপারিশকে সামান্য রদবদল করে জাতীয় সম্মেলনে অনুমোদন প্রদান করে।
এ সুপারিশ অনুমোদিত হওয়ার প্রেক্ষিতে ২০০৯ সাল হতে নয়টি জেলায় বিভক্ত হয়ে এপেক্সের কার্যক্রম বর্তমান কাল অবধি পরিচালিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সময়ের প্রয়োজনে জেলার সংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাস করার অধিকার এপেক্সের জাতীয় বোর্ড বা জাতীয় সম্মেলন সংরক্ষণ করে।
তথ্যসূত্র--- এপেক্স দিশারি ও লেখকের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা।

COMMENTS